ঢাকা ০৪:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সালথায় ওয়ার্ড বিএনপির উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত শামা ওবায়েদের নির্দেশে সালথায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাঁশে যুবদল সালথায় মাদক মামলার তিন সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেপ্তার আগামী জাতীয় নির্বাচনে ফরিদপুর ১ আসেন বিএনপিকে বিজয় করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান -বিল্লাহ খান ফরিদপুরের শ্রেষ্ঠ এসআই প্রশান্ত কুমার মন্ডল সালথায় কৃষকলীগ সভাপতি হারুন ফকির গ্রেপ্তার সালথায় জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ সালথায় যুবলীগ নেতার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শন করলেন: শামা ওবায়েদ সালথায় ৭০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী রমজান গ্রেপ্তার আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদ সালথা উপজেলা কমিটির অনুমোদন

ফাগুন হাওয়ায় মন উচাটন

জনতার দাবী প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় : ০২:৩৮:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৫৬ বার পড়া হয়েছে
জনতার দাবী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শীতের রুক্ষতা শেষে রঙিন হয়ে উঠছে প্রকৃতি। কোকিলের ডাকে মাতোয়ারা চারপাশ। উচাটন মন আর ঘরে থাকে না। বেরিয়ে পড়ে প্রিয়জনের হাত ধরে উৎসব বিহারে। কারণ বসন্ত এসে গেছে ভালোবাসার পসরা নিয়ে।

এক সময় পাশাপাশি দুই দিন পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হতো। তবে পঞ্জিকা সংশোধনে কয়েক বছর ধরে প্রেম ও প্রকৃতির উৎসব দুটো একই দিন উদযাপিত হয়ে আসছে। এবার দিবস দুটি শুক্রবারে পড়ায় উৎসবপ্রিয় জাতির কাছে এ যেন মধুচন্দ্রিমা।

বসন্ত প্রেমের ঋতু। ফাল্গুনে শুরু হয় ভালোবাসার গুনগুনানি। শুধু প্রকৃতি নয়, মানব মনও রঙিন হয়ে ওঠে। খুলে যায় দখিনা দুয়ার। কী নেই বসন্তের! রং, রূপ, রস ও লাবণ্য– সব রয়েছে। আছে মাতাল দখিনা সমীরণ। পাহাড়, বন, নগর, বন্দর– সব রঙিন হয়ে উঠবে বসন্তের আগমনে। রঙিন প্রজাপতির ডানায় প্রেমের বারতা। ডালে ডালে শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়াদের মিছিল। কবিগুরু ভাষায় ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’ তারপরও হুট করে বিষণ্ন দুপুরে কোকিলের কুহু ডাকে মন কেমন করে ওঠে। যেন দূরের কোনো বেদনা মনে উঁকি দেয়। কবি নজরুলের কবিতার মতো ‘এলো মেলো দখিনা মলয় রে প্রলাপ বকিছে বনময় রে/ অকারণ মন মাঝে বিরহের বেণু বাজে/ জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।’

প্রাচীনকাল থেকে বসন্ত উৎসব পালিত হয়ে আসছে। খ্রিষ্টের জন্মের বেশ কয়েকশ বছর আগে মানুষ বসন্ত উৎসব পালন করত। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পাথরে খোদাই করা বসন্ত উৎসবের নমুনা পাওয়া গেছে। সব জাতির পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাতে এই উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। বেদ, পুরাণেও এই উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। ১৫৮৫ সালে সম্রাট আকবর ফসলি সনের প্রবর্তন করেন। একই সঙ্গে প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে বাংলাদেশে ঘটা করে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপনের রীতি চালু হয়। এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে বসন্ত বরণ। পহেলা ফাল্গুন দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গত শতকের নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে পশ্চিমের ভ্যালেনটাইন্স ডে দেশে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। ভালোবাসার যুগল কাব্যে ভরে ওঠে পথপ্রান্তর। যেন ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে।’ শুধু কি যুগল ভালোবাসা? না। এখন ভালোবাসা দিবস হয়ে গেছে সর্বজনীন। আবালবৃদ্ধবণিতার প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে চারপাশ। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় উৎসব হয়ে উঠেছে আরও রঙিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরে বলতে হয়, ‘আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে– দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।’
ভালোবাসার এই দিনে বাংলাদেশের রয়েছে দ্রোহের ইতিহাস। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীরা। সেই আন্দোলনের পথ বেয়ে নব্বইয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল গণতন্ত্রের স্বাদ।

জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হতে যাচ্ছে বসন্ত ও ভালোবাসার উৎসব। রুক্ষ শীত শেষে বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে যেভাবে জেগে ‍ওঠে, রক্তস্নাত বিপ্লবের পর এবারের বসন্ত নতুন রূপে ধরা দিক জাতির কাছে। দেশ হয়ে উঠুক সাম্য ও ভালোবাসার, দায় ও দরদের। বসন্তের দোলা লাগুক সবার হৃদয়ে। ভালোবাসার ভ্রমর গান গেয়ে উঠুক প্রতিটি প্রাণে। জীবন উদ্ভাসিত হোক উৎসবে উচ্ছ্বাসে। ফের ফিরে যেতে হয় কবিগুরুর কাছে, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ আমার আপন হারা প্রাণ আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ/ তোমার অশোকে কিংশুকে অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে…।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ফাগুন হাওয়ায় মন উচাটন

আপডেট সময় : ০২:৩৮:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শীতের রুক্ষতা শেষে রঙিন হয়ে উঠছে প্রকৃতি। কোকিলের ডাকে মাতোয়ারা চারপাশ। উচাটন মন আর ঘরে থাকে না। বেরিয়ে পড়ে প্রিয়জনের হাত ধরে উৎসব বিহারে। কারণ বসন্ত এসে গেছে ভালোবাসার পসরা নিয়ে।

এক সময় পাশাপাশি দুই দিন পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হতো। তবে পঞ্জিকা সংশোধনে কয়েক বছর ধরে প্রেম ও প্রকৃতির উৎসব দুটো একই দিন উদযাপিত হয়ে আসছে। এবার দিবস দুটি শুক্রবারে পড়ায় উৎসবপ্রিয় জাতির কাছে এ যেন মধুচন্দ্রিমা।

বসন্ত প্রেমের ঋতু। ফাল্গুনে শুরু হয় ভালোবাসার গুনগুনানি। শুধু প্রকৃতি নয়, মানব মনও রঙিন হয়ে ওঠে। খুলে যায় দখিনা দুয়ার। কী নেই বসন্তের! রং, রূপ, রস ও লাবণ্য– সব রয়েছে। আছে মাতাল দখিনা সমীরণ। পাহাড়, বন, নগর, বন্দর– সব রঙিন হয়ে উঠবে বসন্তের আগমনে। রঙিন প্রজাপতির ডানায় প্রেমের বারতা। ডালে ডালে শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়াদের মিছিল। কবিগুরু ভাষায় ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’ তারপরও হুট করে বিষণ্ন দুপুরে কোকিলের কুহু ডাকে মন কেমন করে ওঠে। যেন দূরের কোনো বেদনা মনে উঁকি দেয়। কবি নজরুলের কবিতার মতো ‘এলো মেলো দখিনা মলয় রে প্রলাপ বকিছে বনময় রে/ অকারণ মন মাঝে বিরহের বেণু বাজে/ জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।’

প্রাচীনকাল থেকে বসন্ত উৎসব পালিত হয়ে আসছে। খ্রিষ্টের জন্মের বেশ কয়েকশ বছর আগে মানুষ বসন্ত উৎসব পালন করত। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পাথরে খোদাই করা বসন্ত উৎসবের নমুনা পাওয়া গেছে। সব জাতির পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাতে এই উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। বেদ, পুরাণেও এই উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। ১৫৮৫ সালে সম্রাট আকবর ফসলি সনের প্রবর্তন করেন। একই সঙ্গে প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে বাংলাদেশে ঘটা করে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপনের রীতি চালু হয়। এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে বসন্ত বরণ। পহেলা ফাল্গুন দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গত শতকের নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে পশ্চিমের ভ্যালেনটাইন্স ডে দেশে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। ভালোবাসার যুগল কাব্যে ভরে ওঠে পথপ্রান্তর। যেন ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে।’ শুধু কি যুগল ভালোবাসা? না। এখন ভালোবাসা দিবস হয়ে গেছে সর্বজনীন। আবালবৃদ্ধবণিতার প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে চারপাশ। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় উৎসব হয়ে উঠেছে আরও রঙিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরে বলতে হয়, ‘আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে– দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।’
ভালোবাসার এই দিনে বাংলাদেশের রয়েছে দ্রোহের ইতিহাস। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীরা। সেই আন্দোলনের পথ বেয়ে নব্বইয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল গণতন্ত্রের স্বাদ।

জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হতে যাচ্ছে বসন্ত ও ভালোবাসার উৎসব। রুক্ষ শীত শেষে বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে যেভাবে জেগে ‍ওঠে, রক্তস্নাত বিপ্লবের পর এবারের বসন্ত নতুন রূপে ধরা দিক জাতির কাছে। দেশ হয়ে উঠুক সাম্য ও ভালোবাসার, দায় ও দরদের। বসন্তের দোলা লাগুক সবার হৃদয়ে। ভালোবাসার ভ্রমর গান গেয়ে উঠুক প্রতিটি প্রাণে। জীবন উদ্ভাসিত হোক উৎসবে উচ্ছ্বাসে। ফের ফিরে যেতে হয় কবিগুরুর কাছে, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ আমার আপন হারা প্রাণ আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ/ তোমার অশোকে কিংশুকে অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে…।’